Rajmachi Fort - DOT-Maharashtra Tourism
Rajmachi Fort
রাজমাছি দুর্গ মহারাষ্ট্রের পুনে জেলার পশ্চিমঘাট পর্বতের সহ্যাদ্রি রেঞ্জে অবস্থিত। জায়গাটি লোনাভালার বিখ্যাত হিল স্টেশনের কাছাকাছি অবস্থিত। রাজমাছি দুর্গ মহারাষ্ট্র রাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় ট্রেকিং স্থান।
জেলা/অঞ্চল
পুেন έজলা, মহারাϻ, ভারত
ইতিহাস
রাজমাছি দুর্গের দুই হাজার বছরের পুরানো ইতিহাস রয়েছে। এই প্রতিরক্ষা স্থাপত্য প্রাথমিকভাবে বোর ঘাটের দিকে নজর রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। দুর্গ চত্বরে রয়েছে বিশাল প্রাচীর, শক্ত দেয়াল, বিশাল প্রবেশ পথ, আবাসিকদের থাকার ঘর, জল সরবরাহের ব্যবস্থা, প্রশাসনিক ভবন এবং প্রস্থানের জন্য গোপন দরজা। পুরানো স্থাপত্যের কালভৈরবের একটি মন্দির রয়েছে শ্রীবর্ধন এবং মনরঞ্জন দুর্গের মাঝে।
এই দুর্গটি ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের শাসনকালে মারাঠা সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রধান দুর্গ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিল, ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ ১৬৫৭ সালে নতুন কাঠামো তৈরি করে এই দুর্গের সম্প্রসারণ করেছিলেন। এই দুর্গটি পশ্চিম ঘাট পর্বতের অন্যতম আকর্ষণীয় নির্মাণ হিসাবে পরিচিত। রাজমাছি কেল্লা অনেক রাজত্বের সাক্ষী থেকেছে।
দুর্গটি ১৭০৪-১৭০৫ সালের দিকে মুঘল সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এরপর মারাঠারা এর দায়িত্ব নেয়। সময়ের সাথে সাথে, রাজমাছি দুর্গ মারাঠা সাম্রাজ্যের পতন এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উত্থানের সাক্ষী থেকেছে। ১৮১৮ সালে দুর্গটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। রাজমাছি মালভূমির পশ্চিম দিকে অবস্থিত কোন্ডনার প্রাচীন বৌদ্ধ গুহাগুলির একটি মনোরম দৃশ্য রয়েছে। এই গুহাগুলি খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে খোদাই করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
এই অঞ্চলটি বর্ষাকালে সৌন্দর্যের একটি ভিন্ন অনুভূতি দেয় যেখানে প্রচুর জলপ্রপাত, জলস্রোত, সবুজ বন এবং তৃণভূমি আশেপাশের সৌন্দর্যকে সমৃদ্ধ করে। বর্ষা শুরুর আগে আপনারা জোনাকির সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারবেন।
ভূগোল
রাজমাছি দুর্গ পুনে থেকে মুম্বাই যাওয়ার পথে, পশ্চিমঘাট পর্বত শুরুর ঠিক আগে, যা লোনাভালা থেকে ৬.৫ কিমি দূরত্বে অবস্থিত। দুর্গটি মহারাষ্ট্রের সহ্যাদ্রি পর্বতশ্রেণীর অংশ। দুর্গের উচ্চতা ৩৬০০ ফুট। রাজমাছি দুর্গ শ্রীবর্ধন এবং মনরঞ্জন নামক দুটি দুর্গ নিয়ে গঠিত। শ্রীবর্ধন দুর্গের সর্বোচ্চ দৃষ্টিকোণ রয়েছে এবং এটি ৯১৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এই দুর্গ থেকে এলাকার অপরাজেয় দৃশ্য পরিদর্শন করা যায়। মনরঞ্জন দুর্গটি ৮৩৩ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এবং এটি থেকেও শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য পরিদর্শন করা যায়।
আবহাওয়া/জলবায়ু
এই অঞ্চলে সারা বছরই গরম, অল্প শুষ্ক জলবায়ু থাকে যার গড় তাপমাত্রা ১৯-৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এপ্রিল এবং মে এই দুই মাস এই অঞ্চলের উষ্ণতম মাস যখন তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছায়।
শীতকাল চরম এবং তাপমাত্রা রাতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যেতে পারে, কিন্ত দিনের বেলায় গড় তাপমাত্রা থাকে প্রায় ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এই অঞ্চলের বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় ৭৬৩ মিমি।
করনীয়
পর্যটকরা রাজমাছি দুর্গে নিম্নলিখিত স্থান বা দৃশ্যগুলি উপভোগ করতে পারেন:
● দুর্গগুলি একটি সুবিধাজনক পয়েন্ট অফার করে। উত্তর দিক থেকে শুরু করলে আপনি মদন পয়েন্ট, ঢাকবাহিরি এবং ভীমাশঙ্কর দেখতে পাবেন। দক্ষিণ দিক থেকে কাতালধর, লোনাভালা, কারজাতের দৃশ্য দেখতে পাবেন।
● আপনি সেই উপত্যকাটিও দেখতে পাবেন যা পাহাড়ি অঞ্চলগুলির মধ্য দিয়ে কেটে গেছে। আরও এগিয়ে গেলে আপনি ভালভান বাঁধ, তুঙ্গারলি বাঁধ এবং শেষে ডিউকের নাকও দেখতে পাবেন। এছাড়াও আপনি শ্রীবর্ধন দুর্গ থেকে ডানদিকে বাঁদর পাহাড় দেখতে পাবেন।
● দক্ষিণ-পূর্বে (আপনার বাঁ দিক থেকে), আপনি কাতালধর জলপ্রপাত (বর্ষায়), লোনাভালা এবং খান্ডালা নামক যমজ হিল স্টেশনগুলির আভাস দেখতে পাবেন।
● উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ সমৃদ্ধ ট্রেকিঙের সুবিধা পেতে গেলে এই অঞ্চলে আসতে হবে। বিভিন্ন ধরণের পাখি, টিকটিকি, পোকামাকড়ের বাসভুমি এই জঙ্গল। এই বনাঞ্চলে চিতাবাঘেরও সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
● রাজমাছি ট্রেক জোনাকি পোকা দেখার জন্য বিখ্যাত। সূর্যাস্তের পরে জ্বলজ্বল করা এই পোকাগুলি আমাদের একটি জাদুর জগতে টেনে নিয়ে যায়।
● আপনারা বর্ষা শুরুর আগে যদি ট্রেক করেন তবে প্রচুর পরিমাণে বায়োলুমিনিসেন্সের এই সুন্দর দৃশ্যটি দেখতে পাবেন।
নিকটতম পর্যটন কেন্দ্র
পর্যটকরা রাজমাছি দুর্গের কাছে অবস্থিত নিম্নলিখিত স্থানগুলি পরিদর্শন করতে পারেন:
● ঢাক বাহিরি গুহা (৫৪ কিমি)ঃ ঢাক বাহিরি সহ্যাদ্রি পাহাড়ে অবস্থিত একটি গুহা যা পুনে জেলার মালাভাল্লি অঞ্চলের জাম্বিভলি গ্রামের কাছে অবস্থিত।
● উদয় সাগর হ্রদ (১ কিমি)ঃ আপনারা উদয় সাগর হ্রদ পরিদর্শন করতে পারেন যা আনুমানিক ২০০ বছর আগে নির্মিত হয়েছিল। এই হ্রদটি উধেওয়াড়ি বেস ক্যাম্পের নিকট অবস্থিত গ্রামের খুব কাছেই অবস্থিত, মাত্র ১.৫কিমি দূরত্বে এবং বন বিভাগের তলদেশেই অবস্থিত।
● শিরোটা লেক ক্যাম্পিং (৫.৩ কিমি)ঃ ক্যাম্প সাইট লোনাভালা থেকে ১১ কিমি দূরে অবস্থিত। বর্ষাকালে লেকটি তার পাড় ছাপিয়ে যায়। লোনাভালার দিক থেকে শুরু করলে এই হ্রদটি ভালভান্ড ফর্কের কাছাকাছি অবস্থিত।
● কাতালধর জলপ্রপাত রাপেলিং (৬.১ কিমি)ঃ বর্ষার আগমনের পর, কয়েকদিনের মধ্যে একটি আশ্চর্যজনক স্থান, কাতালধর জলপ্রপাতের দরজা খুলে যায়। কাতালধর নামের অর্থ একটি পাথরের খাড়া থেকে সৃষ্ট জলপ্রপাত। এই ৩৫০ ফুট উচ্চ জলপ্রপাতটি কেবল আপনার শারীরিক সুস্থতা পরীক্ষা করে না এটি আপনার মানসিক শক্তিরও পরীক্ষা করে।
খাবারের বিশেষত্ব এবং হোটেল
উধেওয়াড়ি বেস ক্যাম্পের নিকট অবস্থিত গ্রামের গ্রামবাসীরা আপনার জন্য ঘরে রান্না করা সুস্বাদু খাবার তৈরি করতে পারে যেমন - বেশিরভাগ ডিম/মুরগির ঝোল, ভাকরি এবং ভাতের সাথে ডাল। আপনি পোহা, ভাজি এবং ম্যাগির মতো জলখাবারের বিকল্পগুলিও বেছে নিতে পারেন। এছাড়াও কোকুম সরবত, নিম্বুপানির মত পানীয় পাওয়া যায়। আপনি মিসেল পাও, বড়া পাও ইত্যাদিও পেতে পারেন। খাবারগুলি অত্যন্ত সাধারণ কিন্ত এগুলিতে একটি অত্যন্ত খাঁটি মারাঠি স্বাদ রয়েছে – যা একটি ট্র্যাকিঙের ক্লান্তি নিমেষের মধ্যে দূর করতে পারে।
হোটেল এবং কাছাকাছি থাকার সুবিধা / হাসপাতাল / পোস্ট
অফিস/পুলিশ স্টেশন
রাজমাছি দুর্গের কাছে বিভিন্ন হোটেল এবং রিসোর্ট রয়েছে।
লোনাভালার যশ হাসপাতাল উদেওয়াড়ি বেস ক্যাম্প থেকে ১৮ কিমি দূরত্বে অবস্থিত।
নিকটতম পোস্ট অফিস লোনাভালা ১৬ কিমি দূরত্বে অবস্থিত।
লোনাভালা গ্রামীণ পুলিশ স্টেশন আবার রাজমাছি দুর্গ বেস ক্যাম্প থেকে ১৮ কিমি দূরত্বে অবস্থিত।
ভ্রমণের নিয়মকানুন এবং সময়, পরিদর্শনের আদর্শ সময় ও মাস
জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস রাজমাছি ভ্রমণ করার আদর্শ সময় কারণ এখানে বর্ষাকাল আপনাকে জলের ঝর্ণা এবং সবুজের সাথে অভ্যর্থনা জানায় যখন আপনি দুর্গে আরোহণ করতে থাকেন। যদিও এটি একটি সুন্দর জায়গা যেখানে সারা বছরই ভ্রমণ করা যায়। পূর্ণ দৃশ্যমানতার সাথে দুর্গ পরিদর্শনের জন্য দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়টিকে একটি আদর্শ সময় বলে মনে করা হয়। তবে রাতে গাড়ি চালানো তুলনামূলকভাবে কঠিন হয়ে পড়ে।
এলাকায় যে যে ভাষায় কথা বলা হয়
ইংরাজি, হিন্দি, মারাঠি।